Ads Area

রবীন্দ্রনাথের প্রথম অভিনয় কোন নাটকে (লেখক - বিষ্ণু বসু)


বাল্মীকি প্রতিভায় রবীন্দ্রনাথ ও ইন্দিরা দেবী

রবীন্দ্রনাথের প্রথম অভিনয় কোন্ নাটকে? কোন ভূমিকায়? যতদূর জানা যায়, বাড়ির কুস্তির আখড়ার নরম মাটিতে বাখারি পুঁতে মঞ্চ বেঁধেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। খুবই কম বয়স ছিল তাঁর তখন। ইচ্ছে ছিল অভিনয়ের। কিন্তু বাড়ির গুরুজনদের বাধায় সে সাধ পূর্ণ হয় নি তাঁর।

মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের প্রথম অভিনয় নাকি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা ‘অলীকবাবু প্রহসনের নাম ভূমিকায়। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু মতদ্বৈধ আছে। খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘রবীন্দ্র কথা'-য় জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের প্রথম অভিনয় হল 'মানময়ী’ গীতিনাট্যে মদনের চরিত্রে। এটি ছিল একটি ঘরোয়া নাট্যানুষ্ঠান। খগেন্দ্রনাথ যদিও জানিয়েছেন 'মানময়ী' জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা কিন্তু ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী লিখেছেন যে ‘রবীন্দ্রনাথেরই প্ররোচনায় সম্ভবত মানময়ী নাটক (প্রথম প্রকাশ ১৮৮০ ) জোড়াসাঁকোর বাড়িতে আপনা আপনির মধ্যে অভিনীত হয়। এটি কার রচনা সেকালে আমাদের অনুসন্ধান করবার কোনো প্রবৃত্তি হয় নি, তবে এখন মনে পড়ে রবিকাকা জ্যোতিকাকা স্বর্ণপিসিমা অনেক সময় মিলেমিশে গীতিনাট্য রচনা করতেন।' ইন্দিরা দেবীর কথায় মনে হয় 'মানময়ী’ যৌথরচনা, যদিও ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় একে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাট্যগ্রন্থাবলীর অন্তর্গত বলেই নির্দেশ করেছেন। এ গীতিনাট্যের বিষয় ছিল নাকি দেবদেবীর মানভঞ্জন। ইন্দিরা দেবীর ভাষায়, ‘মানময়ীর অভিনয়ে দেবতাদের মধ্যে রবিকাকা আর জ্যোতিকাকা মশায় ছিলেন মনে আছে। খগেন্দ্রনাথের মতে ‘মানময়ী’র বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে মদন-- রবীন্দ্রনাথ, ইচ্ছ—হেমেন্দ্রনাথ, শচী-- নীপময়ী। তিনি আরো জানিয়েছেন এ গীতিনাট্যেই নাকি ঠাকুরবাড়ির মহিলারা প্রথম অভিনয়ে অংশ নিয়েছিলেন।


রবীন্দ্রনাথের অভিনয় বিষয়ে খগেন্দ্রনাথ জানিয়েছেন আরো দুটি আকর্ষক তথ্য। এক, ঠাকুর বাড়ির কোনো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নাকি অভিনীত হয়েছিল 'বিবাহ-উৎসব' নামে একটি গীতিনাট্য এবং রবীন্দ্রনাথ তাতে নিয়েছিলেন নারীর ভূমিকা ! অবশ্য এ অভিনয়ের তারিখ ও কোন ভূমিকায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ সেকথা উল্লেখ করেন নি খগেন্দ্রনাথ। তবে এ প্রসঙ্গে বলা যায় খগেন্দ্রনাথ ছিলেন ঠাকুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী কিন্তু জানিয়েছেন, 'মানময়ীর আগে কি পরে ঠিক মনে নেই, রবিকাকা ও জ্যোতিকাকা দুই ভাইয়ে মিলে অভিজাত বন্ধুবর্গের চিত্তবিনােদনের জন্য বিবাহঘটিত একটি ক্ষুদ্র গীতিনাটিকা অভিনয় করেছিলেন। তাতে তারা দুজনে বিবাহের পক্ষ বিপক্ষ অবলম্বন করে গান করেছিলেন।' রবীন্দ্রনাথ গাইতেন বিবাহের সপক্ষে। নমুনা হিসেবে যে গানগুলো পেশ করেছেন ইন্দিরা দেবী তাতে দেখা যায় উভয়পক্ষের গায়কই হলেন পুরুষ। বিবাহের পক্ষে রবীন্দ্রনাথ গাইতেন :

"একা একা এতদিন কেটে গেল এখন দুখের নিশা প্রভাত হল।
আর না জ্বালা সব' দুজনে এক হব।
সোহাগে সদা রব ঢল ঢল।
তাহারি মুখ চেয়ে
যামিনী যাবে বয়ে
নিবাব তারি প্রেমে হৃদিকমল।"


-- বিপক্ষে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ গাইতেন :


"ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর—সেই যে কঁদুনি কি কব সখা।
কথায় কথায় অভিমান তারি, সাধ্য কি যে সে মন রাখা। গৃহে থেকে সাধ করে—অরণ্যে যে হবে থাকা।"


-- তখন আবার সপক্ষে রবীন্দ্রনাথ গাইতেন :


"সখা সাধিতে সাধাতে কত সুখ
তাহা বুঝিলে না তুমি—মনে রয়ে গেল দুখ। অভিমান আঁখিজল, নয়ন ছল ছল।
মুছাতে লাগে ভালো কত
তাহা বুঝিলে না তুমি—মনে রয়ে গেল দুখ।"




শেষ গানটি 'গীতবিতান’-য়ের নাট্যগীতি অংশে অন্তর্ভুক্ত আছে। লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে উদ্ধৃত একটি গানও কোনো নারীর মনোভাব ব্যক্ত করছে না। তাই খগেন্দ্রনাথ যে ঠিক কোন্ নাটকে রবীন্দ্রনাথের নারীভূমিকা গ্রহণের কথা বলেছেন তা স্পষ্ট হল না। অবশ্য প্রতিমা দেবী জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ নাকি হ. চ. হ. অর্থাৎ হরিশচন্দ্র হালদারের লেখা নাটকে ‘তেরো চোদ্দ বছর বয়সে নায়িকার পাট অভিনয় করেছিলেন।'

দ্বিতীয়ত, খগেন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, ঠাকুরবাড়ীর পারিবারিক অভিনয় মজলিসে একবার কবিকে খ্যাতনামা অভিনেতা অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির সহিত রঙ্গমঞ্চে আরোহণ করিতে হয়। মুস্তাফি মহাশয়ের অঙ্গভঙ্গি ও স্বরের কারুকার্য এত সূক্ষ্ম ও প্রচুর ছিল যে, সহযোগী অভিনেতাদের পক্ষে নিজ ভূমিকায় সম্পূর্ণ মনোনিবেশ রাখা কঠিন হইত। আমরা কবির নিজ মুখে শুনিয়াছি যে, অতটা স্টেজ ফ্রি এক্টরের সহিত মঞ্চে নামিতে সদা সতর্ক থাকিতে হইত এবং তাহাতে তাঁহার নিজের অভিনয়স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাঘাত হইত।'





জয়সিংহের ভূমিকায়




খগেন্দ্রনাথের সাক্ষ্য অনুযায়ী জানা গেল সাধারণ রঙ্গালয়ের অতুলনীয় অভিনেতা অর্ধেন্দুশেখরের সঙ্গে একই মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু কত সালে ও কোন্ নাটকে উভয়ে একসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তা জানা গেল না। সম্ভবত এ ঘটনা ঘটেছিল রবীন্দ্রনাথের শিক্ষানবিশি পর্বেই। সাধারণ রঙ্গালয়ের অভিনেতা হলেও অর্ধেন্দুশেখর ছিলেন ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে জড়িত। তাই রবীন্দ্রনাথ ও অর্ধেন্দুশেখরের একই নাটকে অংশ নেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

যে-নাটকে রবীন্দ্রনাথের অভিনয়ের সন তারিখ নিয়ে বিসংবাদ নেই তা হল জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা 'এমন কর্ম আর করব না' প্রহসনে অলীকবাবুর ভূমিকা। ১৮৭৭ সালে প্রহসনখানি মঞ্চস্থ হয়েছিল। বহুবার এ প্রহসনখানি অভিনীত হয়েছিল। এমন কি, শেষে প্রহসনখানির নাম পাল্টে রাখা হয়েছিল ‘অলীকবাবু'। এ প্রহসনের প্রথম অভিনয়ের বিবরণ তেমন না পাওয়া গেলেও পরবর্তী বেশ কিছু প্রযোজনার বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর লেখায়। অবনীন্দ্রনাথের ড্রামাটিক ক্লাবে মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘অলীকবাবু'। রবীন্দ্রনাথ নিয়েছিলেন অলীকবাবুর ভূমিকা, অবনীন্দ্রনাথ সেজেছিলেন ব্রজদুর্লভ এবং অরুণেন্দ্রনাথ মাড়োয়ারী দালাল। পছন্দসই সিন আঁকানো হয়েছিল। রয়েল-থিয়েটারের সাহেব চিত্রকর দিয়ে। ব্রজদুর্লভ চরিত্রটি এমনিতে ‘অলীকবাবু’ প্রহসনে নেই। রবীন্দ্রনাথ তাকে সৃষ্টি করেছেন। অবনীন্দ্রনাথ বলছেন, 'আমার ব্রজদুর্লভের পার্ট ছিল খুব একটা বখাটে বুড়োর। হেমাঙ্গিনীকে বিয়ে করতে আসছে একে একে এ ও। আমি, মানে ব্রজদুর্লভ তাদেরই একজন। তাছাড়া পিসনী দাসীর ভূমিকাও নিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। এ প্রহসনের জন্যেই নাকি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন এ গানটি—



"আমরা লক্ষ্মীছাড়ার দল ভবের পদ্মপাত্রে জল
সদা করছি টলমল।"


অভিনয় সমাপ্ত হলে সকলে মঞ্চে এসে এ গানটি করেছিলেন।

অবনীন্দ্রনাথের সাক্ষ্যে জানা যায়, 'অলীকবাবু' একটি ফরাসি নাটক থেকে নেওয়া। তাই তার গায়ে নাকি লেগে ছিল ফরাসী গন্ধ। ড্রামাটিক ক্লাব এ প্রহসন মঞ্চস্থ করার সময় রবীন্দ্রনাথ অনেক অদলবদল করে তার ফরাসী গন্ধ দূর করেছিলেন। এইখানেই হল রবিকাকার আর্ট। আর করলেন কী, হেমাঙ্গিনীর প্রার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেন। আগে ছিল এক অলীকবাবুই নানা সাজে ঘুরে-ফিরে এসে বাবাকে ভুলিয়ে হেমাঙ্গিনীকে বিয়ে করে। রবিকাকা সেখানে অনেকগুলো লোক এনে ফেললেন। তাতে হলো কি, অনেকগুলো ক্যারেকটারেরও সৃষ্টি হল। হেমাঙ্গিনীকে রাখলেন একেবারে নেপথ্যে। তাছাড়া তখন মেয়েই বা কই অ্যাকটিং করবার। তাই হেমাঙ্গিনীকে আর বেরই করলেন না। সেবারের লেখায় কতকগুলো এমন মজার ‘ডায়লগ' ছিল, সেই স্টেজকপির পিছনেই উনি লিখেছিলেন বাড়তি অংশটুকু। ভারী অদ্ভুত অদ্ভুত ডায়লগ সব। অলীকবাবু বলছেন এক জায়গায়, একেবারে তাঁহা তাঁহা লেগে যাবে। তাঁহা তাঁহা মানে কী তা তো জানিনে, কিন্তু ভারি মজা লাগত শুনতে।'






নটীর পূজায়





উপরের অংশে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, প্রযোজনার সুবিধে অসুবিধে অনুযায়ী নাটকের স্ক্রিপ্টে কত ধরনের বদল ঘটাতেন রবীন্দ্রনাথ। একটি অদ্ভুত সুরের গান জোগাড় করেও ব্রজদুর্লভের ভূমিকায় জুড়ে দিয়েছিলেন তিনি, যদিও অবনীন্দ্রনাথ শেষপর্যন্ত রাজি হন নি গানটি করতে। উত্তরকালেও দেখা যাবে, নিজের লেখা নাট্যপ্রযোজনার সময়েও নানারকম অদলবদল ঘটাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ, মঞ্চস্থ হবার আগে পর্যন্ত গান বা সংলাপ পাল্টাচ্ছেন তিনি এবং সহশিল্পী ও কর্মীরা একারণে সর্বদাই থাকেন সন্ত্রস্ত। এর মধ্য দিয়ে তিনি যে প্রযোজনার বাস্তব অসুবিধাই উত্তীর্ণ হতে চাইতেন শুধু তাই নয়, তাঁর চির-অতৃপ্ত শিল্পীমন এভাবেই খুঁজে নিতে চাইত নিজেকে ব্যক্ত করার সুযোগ।

ড্রামাটিক ক্লাব প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথ সেজেছিলেন অলীকবাবু। অবনীন্দ্রনাথ বলছেন, 'রবি কাকার ওই তো সুন্দর চেহারা, মুখে কালি ঝুলি মেখে চোখ বসিয়ে দিয়ে একটা অত্যন্ত হতভাগা ছোঁড়ার বেশে স্টেজে তিনি বেরিয়ে ছিলেন।' অসাধারণ অভিনয় নাকি করেছিলেন তিনি। তবে অবনীন্দ্রনাথের একটি কথায় খানিক খটকা লাগে। স্ত্রী-ভূমিকায় অভিনয় করবার জন্য মেয়ে ছিল না ঠাকুরবাড়ি অন্তত যখন ‘অলীক বাবু' অভিনীত হচ্ছে, এ কথা কি যথার্থ ? কেননা এর অনেক আগেই তো ঠাকুরবাড়ির মহিলার অভিনয়ে অংশ নিয়েছেন। 'মানময়ী’তে শচী সেজেছিলেন নীপময়ী। এছাড়া স্বর্ণকুমারী দেবীর লেখা গীতিনাট্য ‘বসন্ত উৎসবে', ইন্দিরা দেবীর সাক্ষ্যে জানা যায়, লীলার ভূমিকা নিয়েছিলেন নতুন-কাকীমা অর্থাৎ কাদম্বরী দেবী। এ গীতিনাট্যেই টিনের তলোয়ার নিয়ে গান গেয়ে যুদ্ধ করেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ। গানটিও তুলে দিয়েছেন ইন্দিরা দেবী তাঁর স্মৃতি কথায়--



"কিরণ। লও এই লও, লও প্রতিফল। কুমার। দেখিব বীরত্ব তোর থেকে কি অটল।
কিরণ। মূঢ় হ রে সাবধান!
কুমার। এই অমোঘ সন্ধান।
কিরণ। এ আঘাতে অবশ্যই বধিব পরাণ।"



রবীন্দ্রনাথ এ গীতিনাট্য কোন ভূমিকা নিয়েছিলেন—কুমার না কিরণের তা জানান নি ইন্দিরা দেবী। তবু অভিনয় করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ টিনের তলোয়ার নিয়ে লড়াই করছেন, এটা একটা খবর বৈকি?
অলীকবাবুর প্রসঙ্গে আবার একটু ফেরা যাক। ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীও জানিয়েছেন 'অলীকবাবু' বহুবার অভিনীত হয়েছে জোড়াসাঁকোয়। যে অভিনয়টি তাঁর কাছে সেরা বলে মনে হয়েছিল তার ভূমিকালিপি ছিল এরকম --



"সত্যসিন্ধু—জ্যেঠামশায়, দ্বিজেন্দ্রনাথ

অলীকবাবু -- রবিকাকা

গদাধর—সেজ পিসেমশায়

জগদীশ -- জগদীশদাদা

হেমাঙ্গিনী-শরৎকুমারী চৌধুরাণী

পিসনি -- স্বর্ণপিসিমা"

পিসনির অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন ইন্দিরা দেবী। বন্ধু সেজেছিলেন অরুণেন্দ্রনাথ। চীনেম্যান সেজে চীনেভাষায় কিচিরমিচির করেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। শরৎকুমারী দেবীর হেমাঙ্গিনীও যে ইন্দিরা দেবীকে মুগ্ধ করেছিল সে কথাও উল্লেখ আছে তাঁর স্মৃতিকথায়।

রবীন্দ্রনাথের প্রিয় বন্ধু প্রিয়নাথ সেনও সগৌরব স্মৃতিচারণা করেছেন ‘অলীকবাবু’ অভিনয়ের। প্রিয়নাথ সেন ছিলেন তাঁর প্রথম যৌবনের অন্যতম সাহিত্য সঙ্গী। 'অলীকবাবু প্রহসনটির স্বাতন্ত্র‍্য সম্পর্কে প্রিয়নাথ ছিলেন বিশেষ সচেতন। এ সম্পর্কে তিনি লিখছেন, 'অভিনয়ের গুণে রসহীন, অকিঞ্চিৎকর নাটকও মনোহর হইয়া উঠে। এমন অনেক নাটক আছে, রঙ্গমঞ্চে যাহাদের খুব আদর, অথচ সাহিত্যে তাহাদের স্থান নাই। কিন্তু কেবলমাত্র অভিনয় চাতুর্যে মুগ্ধ হইয়া আমি প্রথম পরিচয়ে অলীকবাবুর অনুরক্ত হইয়া পড়ি নাই। গ্রন্থকারের অট্টহাস্যময়ী রঙ্গিনী কল্পনার উল্লাসলাঞ্ছিত লাস্য-লীলা-তরঙ্গে হৃদয় নাচিয়া উঠিয়াছিল। ইহার ভিতর একটি নিতান্ত অভিনবরস উপভোগ করিয়াছিলাম।'

প্রিয়নাথ সেন দর্শক হিশেবে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতসমাজ'-য়ের প্রযােজনায়। অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন তিনি। মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটল তাঁর লেখায়, 'এমন সুন্দর অভিনয় কখনও দেখি নাই। নিজে রবিবাবু অলীক প্রকাশ সাজিয়াছিলেন। যাঁহারা অলীকবাবুর অভিনয় দেখিয়াছেন, তাঁহারা জানেন যে, কবিবর শুধু আধুনিক বঙ্গসাহিত্যের শিরোমনি নহেন, নটচূড়ামণিও বটে।' অন্য কুশীলবদের অভিনয়েরও প্রশংসা করেছেন প্রিয়নাথ। লিখেছেন, ‘যিনি সতসিন্ধুবাবু সাজিয়াছিলেন, তাঁহার অভিনয় চরমোৎকর্ষ লাভ করিয়াছিল। অপরাপর পাত্রদিগের অভিনয়ও অতি সুন্দর ও স্বাভাবিক হইয়া ছিল।' সঙ্গীত সমাজ এ প্রহসন অভিনয় করিয়েছিল, ‘একাধিকবার। সম্ভবত আঠারো শো সাতানব্বই সালে অনুষ্ঠিত অভিনয়ের আসরে হাজির ছিলেন প্রিয়নাথ। ‘অলীকবাবু’ সমালোচনা করে খুশি হয়েছিলেন তিনি। সে খুশি প্রকাশ হয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথকে লেখা তাঁর একখানি চিঠিতে।




-----------------------------------------------------------------



সূত্র: বিষ্ণু বসু
রবীন্দ্রনাথের থিয়েটার
প্রতিভাস
কলকাতা
১৯৮৭

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area