Ads Area

চর্যাপদের সন্ধ্যাভাষা কি অশ্লীল?

 





চর্যাপদের সন্ধ্যাভাষা কি অশ্লীল?

চর্যাপদের ভাষাকে অনেকেই সন্ধ্যাভাষা বলে উল্লেখ করেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন, আলোআঁধারি' ভাষা। অর্থাৎ সংকেতের ভাষা বলতেই এমন কথা বলেছেন। কিন্তু সন্ধ্যাভাষার প্রকৃতি বিচার করতে গিয়ে Mercia Eliade এই সন্ধ্যাভাষাকে Obscene Language বলে উল্লেখ করেছেন। এখন বিচার্য প্রকৃতই কি সন্ধ্যাভাষা অশ্লীল?


এই প্রসঙ্গে আমাদের স্মরণে রাখা কর্তব্য, গুহ্যসাধনার ভাষাসংকেতও গুহ্যই হবে। আচার্য অদ্বয়বজ্র তাঁর সরহপাদের দোহা টীকায় এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। যোগিনীদের আচার-আচরন কুৎসিত, রুচিবিহর্গিত ও অশ্লীল। তাঁরা ঘরপতিকে ভক্ষণ করে, পরপতিকে গ্রহন করে, বারাঙ্গনার মত ছলাকলাপূর্ণ রতিবিলাসে মত্ত হয়। কিন্তু যোগিণীর সমাজ-বিগর্হিত আচারই কি সহজ-সাধকদের লক্ষ্য? তা তো নয়।


তাছাড়া চর্যাপদে বা হেবজ্রতন্ত্রে যে-সকল শব্দ সন্ধ্যা শব্দ বলে উল্লিখিত হয়েছে, তার কোনোটিই বাইরের দিক থেকে অশ্লীল নয়। হেবজ্রতন্ত্রের মলয়জ, পদ্মভাজন, কুন্দুরু, কর্পূর, কস্তুরী, বোল, কক্কোল প্রভৃতি শব্দ এবং চর্যাগানের হরিণী, গজেন্দ্র, নদী, নৌকা প্রভৃতি শব্দ অশ্লীল তো নয়ই , বরং উচ্চারণ-সৌকর্যে ও লালিত্যে রুচিকর। এমনকি তাদের অভিধেয় অর্থও মনোহর। মলয়জ= চন্দন, পদ্মভাজন= কমলপাত্র, কর্পূর-কস্তুরী হলো গন্ধদ্রব্য। কুন্দুরুও সুগন্ধি দ্রব্য।


প্রকৃতপক্ষে যিনি যাই বলুন, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়--সিদ্ধাচার্যদের প্রজ্ঞাদৃষ্টির সঙ্গে ছিল আশ্চর্যসুন্দর কবিদৃষ্টি। সহজসাধকেরা ছিলেন জীবনপ্রেমিক ও সৌন্দর্যরসিক। সাধকদের চর্যা গান রচনায় অলংকারের ব্যবহার এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area