Ads Area

সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ । তত্ত্ববোধিনী পর্ব । তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা ও রবীন্দ্রনাথ

ব্রাহ্ম সমাজের মুখপত্র 'তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা' প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৪৩-এ। পত্রিকার প্রথম সম্পাদক হন অক্ষয়কুমার দত্ত। এরপর সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অযোধ্যানাথ পাকড়াশী, হেমচন্দ্র বিদ্যারত্ন, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ তত্ত্ববোধিনীর সেই দায়িত্ব পালন করেন।১৩১৮-য় রবীন্দ্রনাথ এই পত্রিকার সম্পাদক হন।


তত্ত্ববোধিনীর সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ   


আদি ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুখপত্রটি সম্পাদনা ভার গ্রহণ করেন। যদিও এর আগেই ব্রাহ্ম সমাজের ঐ পদে তিনি এসেছিলেন, কিন্তু পত্রিকার ভার গ্রহণ করতে চাননি। কোন ধর্ম ও তত্ত্বমূলক পত্রিকার সম্পাদক হতে তখন তাঁর দ্বিধা ছিল।




সম্পাদক হয়েই রবীন্দ্রনাথ পত্রিকার আকার বাড়িয়ে ফেলেন। পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৬ থেকে বেড়ে হল ২৪। পৃষ্ঠার পরিমাণ বাড়লেও পত্রিকার দামের কোনও পরিবর্তন হল না। পূর্বের মতাে প্রতি সংখ্যা ছ’আনাই ধার্য থাকল। এ সময় রবীন্দ্রনাথ পত্রিকার লেখক ও বিষয় উভয় ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনলেন। সম্পাদক রূপে রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর বিভিন্ন ধরনের লেখা লিখলেনই, লিখিয়ে নিলেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অজিতকুমার চক্রবর্তী, ক্ষিতিমোহন সেন, জগদানন্দ রায়ের মতে লেখকদের দিয়ে। ব্রাহ্ম ধর্মের আলোচনার পাশাপাশি যোগ করলেন সংস্কারমূলক তর্ক-বিতর্ক। গুরুত্ব পেল সাহিত্য। প্রবন্ধের বিষয় হল—সমাজ, সাহিত্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, সমকালীন সংবাদ। তওবোধিনী এই আমূল পরিবর্তনে পত্রিকা গোষ্ঠীর সকলেই উৎসাহ বোধ করেছেন।


পত্রিকা প্রচারের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে পত্রিকার পাতায় লেখা হয় :

গত বৈশাখ মাস হইতে শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় এই পত্রিকার সম্পাদন-ভার গ্রহণ করিয়াছেন। পত্রিকা আকার এবং প্রবন্ধ-প্রাচুর্যে যথেষ্ট পরিমাণে পরিবর্ধিত হইয়া একেবারে নতুন ভাবে বাহির হইতেছে। প্রতিমাসেই শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রীযুক্ত বিধুশেখর শাস্ত্রী প্রভৃতি বঙ্গ সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম লেখকগণের রচনা এবং সম্পাদক মহাশয়ের সারগর্ভ প্রবন্ধাবলী প্রকাশিত হয়। ইহা ভিন্ন বিশেষজ্ঞদের লিখিত কৃষি, বিজ্ঞান প্রভৃতি নানা বিষয়ের তথ্য পূর্ণ রচনা সকল বাহির হইতেছে।



তত্ত্ববোধিনী সম্পাদনার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের সঙ্গে পত্রিকার যোগসূত্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে নতুন বিভাগ খুলেছিলেন “ব্রহ্ম বিদ্যালয়/আশ্রম কথা’র। এই সময় বিশ্বভারতীতে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাঁধে। অব্রাহ্মণ শিক্ষকদের ব্রাহ্মণ ছাত্ররা প্রণাম করবে কি করবে না— এই মর্মে নানান কথা উঠে আসে। রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট ভাষায় প্রণামের সপক্ষে তাঁর মতামত ঘোষণা করেন এবং তা ছাপা হয় তাঁরই সম্পাদিত তত্ত্ববোধিনী-তে। পত্রিকাটি যাতে শুধুমাত্র ব্রাহ্ম সমাজের মুখপত্রই হয়ে না ওঠে এজন্য রবীন্দ্রনাথের প্রচেষ্টার অন্ত ছিল না। তিনি নিজে 'মনুষ্যত্বের সাধনা', 'আত্মপরিচয়', 'বিলাতের পত্র'-এর মতো প্রবন্ধ লিখেছেন সে সময়। চিঠি, অভিভাষণ, গান, কবিতা রচনা করেছেন প্রায় প্রত্যেকটি সংখ্যার জন্য। এখানেই রবীন্দ্রনাথের 'জনগণ মন অধিনায়ক জয় হে' কবিতাটি প্রথম মুদ্রিত হয়— পরবর্তীকালে তা ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়েছে।




তত্ত্ববোধিনীতে প্রকাশিত ভারতের 'জাতীয় সংগীত'


সমস্ত দিক থেকে রবীন্দ্রনাথের সম্পাদিত তত্ত্ববোধিনী নতুন গতি লাভ করেছিল। চার বছরের সম্পাদনায় রবীন্দ্রনাথ তত্ত্ববোধিনীকে ধর্মের বেষ্টনী ছাড়িয়ে সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জুড়ে দিতে পেরেছিলেন।














----------------------------------
ঋণ - প্রবীরকুমার বৈদ্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area